আধুনিক বাংলা গানে প্রেম! আধুনিক বাংলা গান আর প্রেম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আধুনিক বাংলা গানের একটি বড় অংশ প্রেম-ভালোবাসা কে ঘিরে। জনপ্রিয় সব আধুনিক বাংলা গানের অধিকাংশই প্রেম-ভালোবাসা নির্ভর। আধুনিক বাংলা চলচ্চিত্রের বেশির ভাগ গানই প্রেম-বিরহ নির্ভর। বাংলা চলচ্চিত্র বাংলা গানের একটি বড় অংশ। ৯০ দশক থেকে শুরু করে অসংখ্য প্রেমের গান আজও তুমুল জনপ্রিয় হয়ে আছে।
আধুনিক বাংলা গানে যেসব কিংবদন্তিরা অবদান রেখেছেন
অ্যান্ড্রু কিশোর এর আমার সারা দেহ খেয়েও গো মাটি, বিন্দিয়া রে বিন্দিয়া লাল শাড়ি পিন্দিয়া, কারে বলে ভালোবাসা,আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল, প্রেমের সমাধি ভেঙে, ভালোবেসে গেলাম, চাঁদের সাথে সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা, কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো আমি বুক চিরিয়া, আমার বুকের মধ্যে খানে, ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো, তুমি চাঁদের জোছনা নও, পিরিত করিয়া, আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, এই জীবনে,
তুমি আমার জীবন, মায়া লাগাইয়া, সবাই তো ভালোবাসতে চায়, তোমাকে ছাড়া, আমি লাখো জনম ভালোবেসে গেলাম, ও সাথী রে, তুমি ছিলেনা যখন, তুমি আজ কথা দিয়েছো, তুমি যে অনন্যা, প্রেম হইলো বাবুই পাখির বাসা, তুমি এসেছিলে পরশু আজ কেনো আসো নি, আমি আর কারো ভালোবাসা চাই না, চোখের জলে আমি ভেসে চলেছি, প্রেম কখনো মধুর, তুমি আর কথা দিয়েছো উল্লেখ্যযোগ্য।
অ্যান্ড্রু কিশোর এর বাংলা আধুনিক গানে অবদান অল্প কয়টি বাক্যে বলে শেষ করা যাবে না। বাংলা আধুনিক প্রেমের গান বললেই সর্বপ্রথম অ্যান্ড্রু কিশোর এর নামই উঠে আসবে। অসংখ্য গান গেয়ে তিনি আজও দর্শকের অন্তরে বেচে আছে এবং আজীবন এভাবেই বেচেঁ থাকবে।
বাংলা প্রেমের গানে আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, আসিফ আকবর, হাসান, খালিদ এরা অনেক অবদান রেখেছিলেন। আইয়ুব বাচ্চুর সেই তুমি, সে তারা ভরা রাতে, মেয়ে, এক আকাশের তারা তুই, ফেরারী এই মনটা আমার, বারো মাস, তোমার চোখে দেখলে, আমার তুই ছাড়া কে, ও আমার সখি, যদি থেমে যায়, আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি, সাগরিকা ইত্যাদি।
জেমসের ও অনেক জনপ্রিয় প্রেমের গান রয়েছে সেগুলো হলো: কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে, তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম, তারায় তারায় রটিয়ে দেবো তুমি আমার, পৃথিবী বদলে গিয়েছে বদলে গিয়েছো তুমি ইত্যাদি। হাসানের জনপ্রিয় প্রেমের গানগুলো হলো: সুইটি, মাইয়া, ভুলে গেছি, এতো কষ্ট কেনো ভালোবাসায় ইত্যাদি।
আসিফ আকবর কে বাংলা গানের যুবরাজ বলা হয় তার সুন্দর আধুনিক প্রেমের গানের জন্য । আসিফ আকবর এর প্রেমের গানগুলো হলো: ও প্রিয়া তুমি কোথায়, এখনও মাঝে মাঝে, কখনো ভালোবাসোনি, শূন্য লাগে বুক, কি করে তোকে বোঝাই, কেমন আছো তুমি, তোমাকে যেনো ভুলে যাই, ও পাষাণী, একাকী গভীর রাতে, কি করে ভুলে গেলি, আগুন, তোমার প্রেমে, যাবি কত দূরে ইত্যাদি। খালিদের প্রেমের গানের মধ্যে রয়েছে তুমি আকাশের বুকে বিশালতার প্রতিমা, যদি হিমালয় হয়ে, যতটা মেঘ হলে ইত্যাদি।
নতুন প্রজন্মের যারা বাংলা প্রেমের গানে অবদান রেখেছেন
নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইমরান মাহমুদুল, তাহসান খান, মিনার রহমান, হাবিব ওয়াহিদ, আরফিন রুমি , হৃদয় খান, প্রীতম হাসান উল্লেখ্যযোগ্য।ইমরান মাহমুদুল বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী তার অসংখ্য প্রেমের গান রয়েছে, যেমন: বলতে চেয়ে মনে হয় , ফিরে আসেনা, রাতভর , তুমি আমার জীবন, কেনো এতো চাই তোকে, ওহে শ্যাম, তোর মত আমাকে, ইত্যাদি।
তাহসান খানের ও অসংখ্য প্রেমের গান রয়েছে যেমন: আলো, প্রেম তুমি , ঈর্ষা, প্রেমাতাল, আমি সেই সুতো হবো, কেউ না জানুক , কতদূর, একটাই তুমি, ছুঁয়ে দিলে মন, ছলনা হারাই, ভালোবাসার মানে, তোমায় ঘিরে, কে তুমি, তাই তোমাকে ইত্যাদি। মিনার এর জনপ্রিয় প্রেমের গানগুলো হলো: ঝুম, কারণে অকারণে, দেয়ালে দেয়ালে, তুমি তোমার মত, আহারে, যদি তুমি জানতে, সাদা, আবার, আমি তোমার কাছে যাবো, চোখ, একা দিন, তবে, তুই তো আমার সব ইত্যাদি।
আরফিন রুমি অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু কিছু প্রেমের গান উপহার দিয়েছেন সেগুলো হলো: প্রিয়তমা, তোমারই পরশ, একটু একটু, খুঁজে খুঁজে, এক জীবন, তুমি আমার, এতোটা ভালোবাসি, হৃদয় জানে, মনের একলা ঘরে, রঙিন হাওয়া, ওরে প্রিয়া, বাতাসে কান পেতে থাকি, কিছু কথা, তুমি হীনা, তোমার জন্য, প্রথম প্রেমের আলো ইত্যাদি।
হাবিব ওয়াহিদের অসংখ্য প্রেমের গান রয়েছে যেমন: ভালবাসবো ভালবাসবো রে বন্ধু, পৃথিবীর যত সুখ, তোমাকে ছেড়ে আমি , মিথ্যে নয়, বেপোরোয়া মন ইত্যাদি। বালামের অসংখ্য প্রেমের গান রয়েছে সেগুলো হলো: একাকী মন, কি নেশা, বৃষ্টি ঝরা ইত্যাদি।
আধুনিক বাংলা প্রেমের গানের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে ইউটিউব কেন্দ্রিক গানের বাজারে অনেক ধরনের গান রয়েছে। কিন্তু, শুধু বাংলাদেশে নয় বর্তমানে সারা বিশ্বেই প্রেমের গানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুক ইউটিউব এ প্রেমের গানগুলো মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় এবং তরুণ প্রজন্ম এসব গান বেশি পছন্দ করে।
তাই বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও এখন বেশি বেশি প্রেমের গান তৈরি করার দিকে নজর দিয়েছে। দর্শকের চাহিদার উপর নির্ভর করেই মূলত গান তৈরি করা হয়।
বর্তমানে প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী, গীতিকার সবাই প্রেমের গান সৃষ্টির দিকেই নজর দিয়েছে। মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রেম- ভালোবাসা। গীতিকাররা প্রেমের গানের মাধ্যমে তাদের আবেগ অনুভূতি ভালোবাসা প্রেম প্রকাশ করে যা মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।
মূলত মানুষের পছন্দের জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রেমের গান বেশি তৈরি করে। মানুষের চাহিদা বিবেচনা না করলে তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই, বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে প্রেম।
আধুনিক বাংলা গানে প্রেম!- মূল জ্ঞাতব্য
ওপরের পুরো অংশটি এই নিবন্ধটির মূল আলোচনাকে আরও জোড় দেয়। আমি এখন যা বলতে যাচ্ছি, তা হল – ” আধুনিক বাংলা গানে প্রেম! ” উক্ত বাক্যটিতে যে বিস্ময়সূচক ” ! “ চিহ্নটি ব্যবহার করা হয়েছে,তা বোধহয় নিবন্ধটির উপরের অংশের যুবক নিবন্ধক খেয়ালই করতে পারেননি! প্রথমত ”আধুনিক বাংলা” আর তারপর ” গানে প্রেম ” দেখার পর আর আশে-পাশে খেয়াল না করে; সরাসরি প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে নিবন্ধটি লেখা শুরু করেছেন।
চেষ্টা করেছি; কোন পরিমার্জন না করে তার লেখাটি নিষ্কলঙ্ক রাখার। তবুও, তার জানা শ্রেষ্ঠ আধুনিক বাংলা প্রেমের গানের তালিকা যেন শেষই হচ্ছিলো না; তাই তালিকাটি থেকে নির্বিচারে কিছু শ্রেষ্ঠদের বাদ দিয়েছি। এবং, তারপরেই নিবন্ধের এই মূল জ্ঞাতব্য লিখছি।
বর্তমান সময়ের ঝাপসা আলোর প্রকোপে দিন দিন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সবই। দিন দিন বাড়ছে অসুস্থতা, বিনোদনের নামে অসুস্থতা, জ্ঞানের নামে অজ্ঞানতা, আলোর মতো করে বাড়ছে অন্ধকার। সেখানে বসে যখন কেও, জ্ঞানশূন্য হয়ে জ্ঞানের শিক্ষা দিতে চায়; তখন বিশ্রী হয়ে যায় সুশ্রী, অশিক্ষা হয়ে যায় শিক্ষা, এবং নিকৃষ্ট কামভাব হয়ে যায় পবিত্র প্রেম।
এইসবের দিক্ষা নিয়ে যখন আত্না আর সত্তা ছাড়া মানুষ; নিজেদের মধ্যে প্রেম খোঁজে এবং তা নিয়ে গান লেখে তখন এই বিকৃত প্রেমের গানগুলো হয়ে যায় সবচেয়ে বেশি বিক্রিত! লুফিয়ে গ্রহন করছে মানুষ এইসব অর্ধ-অন্ধ জ্ঞানগুলো। আর এইভাবেই দিন দিন ঘোলা হয়ে যাচ্ছে পবিত্র প্রেম আর নির্লিপ্ত ভালোবাসার সরল আখ্যান। অনুভূতির চেয়ে বেশি সহানুভূতির খেলাই চলে। বাড়তে শুরু করেছে আধুনিকতার নামে বর্বরতা! পবিত্র ঘোষিত হচ্ছে নিকৃষ্টতা।
বর্তমান আধুনিক বাংলা গানে প্রেমের বিষয়টা থেকে যায় নেশার্ত- মাতালতায়, স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার নর্দমায়, কিংবা শুধু কোমল শরীরে নান্দনিক সুড়সুড়ির দমকা হাওয়ায়! আর, সেইসব গান শুনে যারা প্রভাবিত হয়; তাদের অবস্থা ওপরের সেই যুবক নিবন্ধকের মতো, যার প্রশংসা করা ছাড়া অন্য কোন বিষয় মস্তিষ্কে নেই।
নেই, জ্ঞানের বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা- সমালোচনার কোন চেতনা কিংবা কোন বিষয় অনুধাবন করার ইচ্ছা। আর, দিন দিন বাড়ছে এই সত্তাহীন অবস্থা। এই অর্ধ- অন্ধ অজ্ঞানতায় সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি ও সাহিত্য। তাই, আমি কোনমতেই আমি এক হতে পারছি না সেই যুবক নিবন্ধকারের সাথে। আর, আমি বলবো; বর্তমান অধিকাংশ আধুনিক বাংলা গানে প্রেমের বিষয়টা শেকড়ের তলাতে বেশ্যাবৃত্তির মতো; শুধু খরিদ্দারের ইচ্ছাতেই সব হয়!
Leave a Reply