April 23, 2024
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্য। বাংলা সাহিত্যের আধুনিকায়নে তার ভূমিকা অপরিসীম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইউরোপিয়ান সাহিত্যের বিভিন্ন উপাদান এনে বাংলা সাহিত্যের নবায়ন করেছেন এবং বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে বাংলা সাহিত্যের একটি নতুন মাত্রা দাড় করিয়েছেন। আজকের এই নিবন্ধটিতে আমি আপনাদের কাছে বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবস্থান পরিস্কার ভাবে তুলে দ্ধরার চেষ্টা করবো।

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬১ সালের ৭ ই মে ( ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ এ বৈশাখ )। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মায়ের নাম সারদা দেবী। তার দাদার নাম দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং স্ত্রীর নাম হল মৃণালিনী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৫ জন সন্তান ছিল।

তারা হলেনঃ মাধুরীলতা, রথীন্দ্রনাথ, রেণুকা, মীরা, শমীন্দ্রনাথ। স্কুলের শিক্ষা তার ভালো লাগতো না তাই তিনি বাড়িতে গৃহশিক্ষক রেখে পড়াশোনা করতেন। ১৪ বছর বয়সে ওনার মা মারা যান। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতেন। বাড়ির চাকর এবং দাদা-দিদিদের কাছেই মানুষ হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক অবদান রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। দীর্ঘ ১২ বছর পারিবারিক জমিদারীর কাজে শিয়ালদহ ও শাহজাদপুরে থাকাকালীন সময়ে তিনি ‘ আমার সোনার বাংলা ‘ কবিতাটি লিখেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্প রচয়িতা এবং বাংলা ছোটগল্পের শ্রেষ্ঠ শিল্পী। তার লেখনীতে বাংলা ছোটগল্পের উদ্ভব, বিকাশ ও সমৃদ্ধি ঘটেছে। তার ছোটগল্প বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পগুলোর সমতুল্য।

তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। অভিলাষ তার প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা।১২৮৪ বঙ্গাব্দে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ” ভিখারিনী ‘ গল্প রচনার মাধ্যমে ছোটগল্প লেখক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর থেকে তিনি জীবনের প্রায় শেষ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৪ বছরে তিনি অখণ্ড গল্পগুচ্ছে সংকলিত ৯৫ টি ছোটগল্প রচনা করেছেন। এর বাইরেও “সে “, “গল্পসল্প” এবং “ লিপিকা” গ্রন্থে রয়েছে তার আরও গল্প সংকলিত হয়েছে।

“মুসলমানির গল্প” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সর্বশেষ গল্প। পারিবারিক জমিদারি তদারকির সুত্রে নদীয়ায় বসবাসের সময়টি রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প রচনার স্বর্ণযুগ। “সোনার তরী” কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোও তিনি একই সময়ে রচনা করেছেন। গল্পকার হিসেবে তিনি যেমন বরেণ্য , ঔপন্যাসিক হিসেবেও বাংলা সাহিত্যে তার স্থান সুনির্দিষ্ট। তার রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে “চোখের বালি”, “গোরা”, “ চতুরঙ্গ” , “ ঘরে- বাইরে”, “ শেষের কবিতা”, “যোগাযোগ” বাংলা উপন্যাসের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

বাংলা নাটক রচনার ক্ষেত্রেও রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিত। তার রচিত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলঃ “রাজা”,”অচলায়েতন”, ”ডাকঘর “, “ মুক্তধারা”, “ রক্তকরবী ”।
মাত্র ১৫ পনেরো বছর বয়সে তার প্রথম কাব্য “ বনফুল” প্রকাশিত হয়।”গীতাঞ্জলী“ এবং অন্যান্য কাব্যের কবিতার সমন্বয়ে স্ব – অনূদিত “ Song Offerings” গ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে প্রথম এশীয় হিসেবে তিনি নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন। বাংলা ছোটগল্পের তিনি পথিকৃৎ ও শ্রেষ্ঠ শিল্পী। “ মানসী”, “সোনার তরী”, “চিত্রা”, “ক্ষণিকা” , “ বলাকা” , “ পুনশ্চ “, “ জন্মদিনে “, “শেষ লেখা “, তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।

বাংলা গানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান

বাংলা সাহিত্য আর গান একটি অন্যটির পরিপূরক। সাহিত্য ছাড়া গান অচল। ভালমানের কবি- সাহিত্যিকরাই গান লিখে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক গান লিখেছেন। তার এই গানগুলো আজ ও গাওয়া হয়। বাংলা চলচ্চিত্রে ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা অনেক গান রয়েছে। বাংলা গানে তার অবদান অনস্বীকার্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কিছু বিখ্যাত সঙ্গীত রয়েছে সেগুলো হল।

আমার হিয়ার মাঝে, মাঝে মাঝে তব, ভালবেসে সখি নিভৃতে, তুমি রবে নিরবে, মম চিত্তে নিতি নিত্তে, দারিয়ে আছো তুমি আমার, আমি তোমার সঙ্গে, মনোমোর মেঘের সঙ্গী, আমারো পরানোও যাহা চায়,খোলা হাওয়া, তুই ফেলে এসেছিস কারে, সকল দুখের প্রদীপ, যখন পারবে না মোর, শ্রাবণের ধারার মতো, একলা চল রে, তোমার অসীমে, সেদিন দুজনে, হঠাৎ দেখা, ও যে মানে না মানা, পুরনো সেই দিনের কথা, কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা, আমি চিনিগো চিনি তোমারে, আমার রাত পোহাল, যে রাতে মোর দুয়ারগুলি, চোখের আলোয় দেখছিলাম, একটুকু ছোঁয়া লাগে,

আগুনের পরশমণি, প্রাণ ভরিয়ে তৃষ্ণা হরিয়ে, পাগল হাওয়ায় বাদল দিনে, মায়াবন বিহারিণী, ভালোবাসি ভালোবাসি, প্রাণ যায় চক্ষু না চায়, তুমি রবে নিরবে, মায়াবন বিহারিণী, দাড়িয়ে আছো তুমি গানেরও ওপারে, জাগরণে যায় বিভাবরি, প্রেমেরও জোয়ারে, আধেকো ঘুমে নয়ন চুমে, আমার ভিতর ও বাহিরে, সখি ভাবনা কাহারে বলে, তোমার হল শুরু আমার হল সারা, চোখে আমার তৃষ্ণা, আমার রাত পোহাল, আমার মল্লিকা বনে ইত্যাদি।

বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখা এই কবি ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট ( ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ এ শ্রাবণ) জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার ৮০ বছরের জীবনে ৫২ টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮ টি নাটক, ১৩ টি উপন্যাস, ৯৫ টি ছোট গল্প, ১৯১৫ টি গান, ৩৬ টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্য সংকলন করেছেন। উনি ২০০০ টির বেশি ছবি একেছেন। ওনার লেখা দুটি গান দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয়। বাংলা সাহিত্যের সকল শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন।

তিনিই প্রথম নোবেল বিজয়ী কবি। তিনি বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, উপন্যাসিক, সঙ্গীতকার, চিত্রশিল্পী, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক। তিনি বাঙ্গালীর গর্ব। বাংলা সাহিত্যে তার এই অতুলনীয় অবদানের জন্য দুই বাংলার কোটি কোটি বাঙালি শ্রদ্ধার সাথে তাকে আজীবন স্মরণ করবে।

তো এই পর্যন্তই এই নিবন্ধটি; আশা করি ভালো লেগেছে। যদি চান, আপনি এমন আরও নিবন্ধ পড়তে পারেন। আরও পড়তে পারেন বাংলা শাস্ত্রীয় সংগীতে নজরুল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *