হিমু-হুমায়ূন আহমেদ বই রিভিউ হল আজকের নিবন্ধের মূল বিষয়। যারা বাংলা আধুনিক সাহিত্যের পাঠক তারা বেশির ভাগই হিমু-আর হুমায়ূন আহমেদকে জানেন। বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। অনেকে তাকে শরৎচন্দ্রের চেয়েও বেশী জনপ্রিয় লেখক হিসেবে গণ্য করেছেন। আর, এই জনপ্রিয়তার জন্য তার সৃষ্ট চরিত্র হিমুর ভুমিকা অপরিসীম। আর, আজকের বিষয়ই হল হিমু-হুমায়ূন আহমেদ বই রিভিউ।
হুমায়ূন আহমেদ হিমু চরিত্রের কাহিনী নিয়ে লেখছেন ২৫ টি বই। এই বই গুলো রচিত হয়েছে বিভন্ন সময়ে; বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে। হুমায়ূন আহমেদ এমনকি বলেছেন; তিনি যখন হিমু লেখেন, তখন তিনি ভাবেন, তিনিই হিমু। তার এই কথা বোধ হয় হিমুর চরিত্রের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।
কারণ, যারা পাঠক তারা একটু হলেও চিনতে চায় তাঁদের লেখকদের; একটুখানি কাছ থেকেই। তাই; যখন তাদের লেখককে তারা খুঁজে পায় তাদের পঠিত বই গুলোতে তখন সেটা তাদের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
হিমু-হুমায়ূন আহমেদ বই রিভিউ
হুমায়ূন আহমেদের হিমু চরিত্রটি অবলোকন করা হয়েছে হলুদ রঙ্গে। আর, হিমুর চরিত্রটির মূল প্রতিনিধিত্বকারী রঙ ধরা হয়েছে হলুদ। হুমায়ূন আহমেদের হিমু বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৯৩ সালে। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল প্রতীক প্রকাশনী থেকে। হিমু বইটির রিভিউ দেয়ার পূর্বে বলে রাখা উচিত হিমু চরিত্রটির প্রথম প্রকাশ ঘটে।
তারপর থেকে একে একে মোট ২৫ টি বইয়ে হিমু চরিত্রটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই নিবন্ধটিতে যেই ” হিমু ” বইটির রিভিউ করবো তা ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত প্রথম আনুষ্ঠানিক ” হিমু ”
হিমু-হুমায়ূন আহমেদ বই চরিত্রসমূহ ও গল্পের সুত্রপাত
হিমু- চরিত্রটিকে ঘিরে হুমায়ূন আহমেদ প্রথম গল্প শুরু করেন তার ময়ূরাক্ষী উপন্যাসে ১৯৯০ সালে। এরপর হিমুর গল্প আবার শুরু হয় তার ” দরজার ওপাশে ” যা প্রকাশিত হয় ১৯৯২ হয় তারপরই চলে আসে। আর তার পরেই চলে আসে সরাসরি হিমু চরিত্রকে ঘিরে হুমায়ূন আহমেদের হিমু সিরিজের ৩য় বই অথচ আনুষ্ঠানিক ভাবে হিমু সিরিজের প্রথম বই ” হিমু” । বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে।
হিমু- বইটির গল্পের চরিত্রসমুহঃ
- হিমু
- রূপা
- এষা
- মোরশেদ – এষার স্বামী
- ইয়াদ – হিমুর বন্ধু
- নীতু – ইয়াদের স্ত্রী
- মজনু মিয়া – ভাতের হোটেলের মালিক
- ইরতাজুল করিম- মনোবিজ্ঞানী
- বাদল – হিমুর ফুফাতো ভাই
হিমু গল্পের সুত্রপাতঃ
হিমু-গল্পের সুত্রপাত হয় ‘ময়ূরাক্ষী’ এবং সেখানে দেখা যায় হিমুর বাবা একজন মানশিক বিরাকগ্রস্থ মানুষ। এবং তিনি চাইতেন তার ছেলে হিমু একজন মহাপুরুষ হোক। তার বিশ্বাস ছিল যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানান যায় তবে মহাপুরুষও বানান সম্ভব।
তাই তিনি একটি বিদ্যালয় খুলেছিলেন; আর তার একমাত্র ছাত্র হিমু। হিমুকে মহাপুরুষ বানানোর জন্য তিনি তার স্ত্রী অর্থাৎ হিমুর মাকে তিনি খুন করেন। আর, তারপর এক সময় হিমুর বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যান। আর; তার মৃত্যুর আগে তিনি হিমুকে বলে যান কীভাবে সে কি করবে; একজন মহাপুরুষ কীভাবে হবে।
তিনি হিমুকে বলে জান ১৬ বছর পর্যন্ত যেন সে তার মাতৃকুলে অর্থাৎ মামাদের কাছে থাকে। কারণ; তার মামারা পিশাচ প্রকৃতির; আর পিশাচ প্রকৃতির মানুষের সংস্পর্শে না গেলে মানুষের শত গুণ সম্পর্কে ভালো ধারণা হবেনা। হিমু তাই করে এবং বড় হওয়ার পর তার ফুফুর বাড়িতে আসে। সেখানেও এক সমস্যার সুত্রপাত হয়; আর তা হলো তার ফুফাত ভাই বাদল তার বড়সড় ভক্ত।
হিমুর সংস্পর্শে এসে সে ইন্টারমিডিয়েটে ৩ বার ফেল করেছে। এবং, একমাত্র বাদল হিমুকে মহাপুরুষ মনে করে ও তার হিমুর প্রতি বিশ্বাস অগাধ। আর; হিমু যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়তো তখন ২ বছর পর প্রথম কথা হয় রুপার সাথে আর রুপা হিমুকে ভালোবেসে ফেলে। সে চায় হিমুও যেন তাকে ভালবাশে কিন্তু হিমু যেহেতু মহাপুরুষ হওয়ার সাধনা করছে; তবে কীভাবে সে স্বাভাবিক হয়ে রুপার কাছে যাবে।
মুলত হুমায়ূন আহমেদ তার ” ময়ূরাক্ষী ” উপন্যাসে প্রথম এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং সেখান থেকে শুরু হয় হিমু গল্পের পথচলা। এরপরে চলে আসে ” দরজার অপাশে ” আর তারপরেই চলে আসে ” হিমু ” বইটি। হিমু বইটিতে হিমুর জীবনের এক স্বাভাবিক চিত্র ফুটে উঠেছে।
হিমু-হুমায়ূন আহমেদ কাহিনী সংক্ষেপ
হিমু উপন্যাসটিতে হুমায়ূন আহমেদ কয়েকটি প্রেক্ষাপটের বর্ণনা করে উপন্যাসের অংশটি সেভাবেই রেখে শেষ করেন; আর এই উপন্যাসে মূলত লেখক হুমায়ূন আহমেদ হিমু চরিত্রের জীবনে নতুন একা স্বাভাবিকতার উপাখ্যান। তার মতে হিমুর জীবন এমনই। কোথাও আটকে না থাকা।
হিমু- উপন্যাসটির কাহিনী সংক্ষেপ বর্ণনা করা হল। প্রথমে আমরা দেখতে পাই এষা ও মোরশেদের প্রেক্ষাপট; এষা মোরশেদকে ডিভোর্স দিয়েছিল কারণ মোরশেদ মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিল; তারপর সে আরও অসুস্থ হয়ে পরে। এরপর এষার সাথে হিমুর পরিচয় হয়; যখন এষার দাদি অসুস্থ ছিল এবং হিমু তখন তাদের সাহায্য করে আর সেই সুত্রে তাদের বাড়িতে হিমুর যাওয়া আসা। আর; মোরশেদের সাথেও হিমুর পরিচয় হয়ে ওঠে, আর মোরশেদ হিমুকে মামা বলে ডাকে আর হিমুও তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করে।
এপর যার প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা আসে; সে হল হিমুর বন্ধু ইয়াদ ও তার স্ত্রী নীতু। দেখা যায় হিমুকে ইয়িয়াদ নিজের রিসার্চের ব্যাগ বহঙ্কারি হিসেবে রেখেচিল কিন্তু হিমু কিছিদিন পর আর কাজ করেনি। ইয়াদের রিসার্চে বিষয় ভিক্ষুকদের জীবনযাপন। আর; সে ঐ জন্যে নিজেও ভিক্ষুক হয়েছিলো। হিমু তার ভবিষ্যদ্বাণী নিতুকে বলে দিত সবকিছু আগাম; আর তা সত্যিও হয়। তাই নীতুর সন্দেহ হিমু ইয়াদকে হয়তো এই বিষয়ে উদবুদ্ধ করেছে।
তাই হিমুর পিছনে কুকুর লেলিয়ে দেয় নীতু; তাকে মারার জন্য। এর পরেই চলে আসে, হিমু আর রুপার প্রেক্ষাপট। হিমুর রুপার প্রতি খামখেয়ালি আচরণের পরও রুপা হিমুকে একটা চিঠি লেখে এবং সেখানে হিমুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা আর তার সাথে যশোরের বাগানবাড়িতে অবকাশ যাপনের অনুভুতিও প্রকাশ করে। আর, তার পরের চিঠিতেই রুপা হিমুকে নিয়ে যে দুঃস্বপ্ন গুলো দেখছিল তার বিষয় উল্লেখ করে হিমু কেমন আছে তা জানতে চায়।
তার পরবর্তী প্রেক্ষাপটে এসে দেখা যায়, ডা. ইরতাযুল করিমের সাথে হিমুর আলাপ। হিমু ডা. ইরতাযুল করিমকে তার ছোট মেয়ে সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী দেয় তা মিলে যায় এবিং যার কারণে ডাক্তার বুঝতে পাড়ে হিমু স্বাভাবিক মানুষ না; তাই তিনি আর বেশিদুর এগোন না হিমুর সাথে। আর তার ভেতরেই হিমু ডাক্তারকে তার বাবার কৃতকর্মের বর্ণনা দেয়।
তার পরবর্তী ঘটনায় দেখা যায় মজনু মিয়াকে। মজনু মিয়া একজন হোটেল মালিক এবং সে হিমুর এক ভবিষ্যদ্বাণীতে তাকে সন্দেহ করেছিল; কিন্তু পরবর্তীতে সেই সন্দেহকে ভেদ করে তার ভবিষ্যদ্বাণী যখন সত্য হয় তখন সে হিমুকে পীরের মতো ভক্ত করতো। আর সেই কারণে তার কোন টাকা দেয়া লাগত না মজনু মিয়ার হোটেলে। কিন্তু, যখন হিমু ইয়াদ আর মোরশেদকে পরিচয় করে দিয়ে আসে মজনু মিয়ার হোটেলে,
তখন তারাও সেখানে যাওয়া শুরু করে। কিন্তু মজনু মিয়া এতে করে বিরক্ত হয়; কিন্তু তিনি হিমুকে বলেন হিমুর বিষয়টা আলাদা। তাই হিমুর জন্য সব সময় তার হোটেল দুয়ার খোলা। কিন্তু, অন্য কেও না। আর, হিমু যেন বাদল থেকে দূরে থাকে সে জন্য তাকে টাকা দিত বাদলের বাবা; কিন্তু তারপরও হিমুর উপকার করেছিল বাদল।
এরপর উপন্যাসের শেষদিকে হিমু চেষ্টা করে এষা আর মোরশেদ কে এক করার আর তা সফল হয়। এবং, হিমু এষাকে যে ভবিষ্যদ্বাণী দেয় তা সত্যি হওয়ার সাথে সাথে শেষ হয় হিমু উপন্যাস।
হিমু-হুমায়ূন আহমেদ বই রিভিউ- পাঠ পরবর্তী পর্যালোচনা
হিমু-হুমায়ূন আহমেদ বইটি পরে যা বোঝা গেল তা হল হিমু একজন শিক্ষানবিশ মহাপুরুষ। তার জীবনে ছোট থেকেই এই ” মহাপুরুষ ” শব্দটি যে পরিমান প্রভাব বিস্তার করেছে তা তার পরবর্তী জীবনে তাকে সেখান থেকে পালাতে দেয়নি। তার সাথে ঘটে যাওয়া সেই বীভৎস দিনগুলো তাকে ধাওয়া করছে সারাজীবন।
ফলে নিজের সেই অভিশাপ থেকে তার জীবন হয়েছে অত্যন্ত একা আর অগোছালো। হতে পাড়ে অনেকে তার সান্নিধ্য চায়; কিন্তু কেও তাকে সেভাবে জানে না। তাই সে নিজেকে লুকায় তাদের কাছ থেকে; পালিয়ে বাঁচে। আর, সুযোগ পেলে চেষ্টা করে তাদের যেকোনো রকমের সাহায্য করার। আর জীবনে বিভিন্ন মানুষের হঠাৎ আগমন আর প্রস্থান হিমুর জীবনের কাছে বিষয়গুলো সাধারণ হয়ে উঠেছে।
তো এই ছিল, হিমু-হুমায়ূন আহমেদ বই রিভিউ। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে; যদি এমন আরও নিবন্ধ পড়তে চান তবে পড়তে পারেন হুমায়ূন আজাদ- এর ‘নারী’ কেন নিষিদ্ধ?
Leave a Reply