April 21, 2024
আরেক ফাল্গুন-জহির রায়হান বই রিভিউ

আরেক ফাল্গুন-জহির রায়হান বই রিভিউ

আরেক ফাল্গুন-জহির রায়হান বই রিভিউ আজকের নিবন্ধের মূল বিষয়। আরেক ফাল্গুন হল জহির রায়হানের একটি ছোট উপন্যাস। এটি রচিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দলনের স্মৃতিতে ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী উদযাপনের পটভূমি নিয়ে। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে যা তৎকালীন গন- অভভুত্থান নতুন মাত্রার শক্তি দিয়েছিল। জহির  রায়হানের এই উপন্যাসের পাঠ পরবর্তী পর্যালোচনা করতে গেলে প্রথমেই আগে আরেক ফাল্গুল উপন্যাস নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। তার পরেই সফল হবে আরেক ফাল্গুন-জহির রায়হান বই রিভিউ।

আরেক ফাল্গুন-জহির রায়হান উপন্যাসের সারমর্ম

” আরেক ফাল্গুন ” উপন্যাসটি যে প্রেক্ষাপটটির ওপর লেখা হয়েছে তা হল ১৯৫৫ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা। মূল চরিত্র মুনিম; মুনিম একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রনেতা। এছাড়াও আছে আরও অনেক চরিত্র সালমা, রেনু, বানু, নিলা, আসাদ, কবি রসুল প্রমুখ; এবং তারা সকলেই শিক্ষার্থী। ১৯৫২ সালের  ২১ ফেব্রুয়ারীর মর্মান্তিক এবং একই সাথে বীরত্বপূর্ণও।

” আরেক ফাল্গুল ” উপন্যাসটি শুরু হয় তৎকালীন ভিক্টোরিয়া পার্কে সিপাহী বিদ্রোহের নির্মম স্মৃতিবিজড়িত বর্ণনা দিয়ে। এরপর দেখা যায়, সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট পরিহিত খালি পায়ে একটি ছেলে হেঁটে যাচ্ছে; মুনিম! এরপর দেখা যায় সালমা, রেনু, বানু, নিলা, আসাদ, কবি রসুল প্রমুখ সকলেই শিক্ষার্থী। ভাষা শহীদদের মৃত্যুকে সার্থক করার জন্য আরও একবার আন্দোলন শুরু হল বাংলা মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবিতে।

তিন দিন সর্বস্ব খালি পায়ে চলা, শহীদদের স্মরণে রোজা রাখা এবং শহীদদের স্মরণে কাল ব্যাজ পড়া; এইসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী। কিন্তু, স্বৈরাচারী শাসকদের তাতেও বাঁধা; তাই বন্ধ করল সকল মিছিল-মিটিং আর বেআইনি করে দেয়া হল সভা এমনকি কাল ব্যাজ পরা, আর সাথে রাজপথে স্লোগান। কিন্তু, অদম্য প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেঙ্গে পড়ে সব নতুন আইন আর বেআইন।

১৯৫৫ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী আগের রাতে, মেডিকেল হোস্টেল, মুসলিম হল, চামেলি হাউজ, ইডেন হোস্টেল, ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা সকলেই অতন্দ্র হয়ে জেগে থাকল সারারাআত, আবার কোথাও কোথাও জটলা বেঁধে গাইতে লাগলো ” ভুলবো না ভুলবো না, ২১ শে ফেব্রুয়ারী “। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হল চারদিক; সেগুলো যেন তীরের মতো বিধে যাচ্ছিলো স্বৈরাচারী শাসকের কানে! তাই স্বৈরাচারী পুলিশ রাতেই আক্রমণ করলো মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে, গ্রেফতার করল অসংখ্য জনকে।

আরেক ফাল্গুন-জহির রায়হান বই রিভিউ

তারপরও, মনে অদম্য বিদ্রোহ নিয়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারী সকালবেলা সবাই মিলে গনজমায়েত হল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আর উত্তোলন করা হল কালো পতাকা। আর, তার পরেই সেখানে আবার হামলা চালায় বর্বর পুলিশ বাহিনী, আবার চালাও হয় গ্রেফতার, আর নিয়ে উঠানো হয় প্রিজন ভ্যানে। প্রিজন ভ্যান থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা শ্লোগান দেয় ” বরকতদের খুন ভুলবো না, শহীদদের খুন ভুলবো না, শহীদ স্মৃতি অমর হোক!”

এর মধ্যে জেলের গেটে পৌঁছে যায় প্রিজন ভ্যানগুলো, এরপর শত শত শিক্ষার্থীর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে যায় ডেপুটি জেলার! তখন কেও একজন বলে উঠলো “এতেই ঘাবড়ে গেলেন নাকি? আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব!” আর এই ভাবেই শেষ হল উপন্যাসটি। উপন্যাসটির মাধ্যমে জানানো হল ফাল্গুনের পর ফাল্গুন যাবে আর দ্বিগুণ হতে থাকবে অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আর, বাঙ্গালী যেভাবে তাঁদের ভাষার অধিকার আদায় করেছে ফাল্গুনের পর ফাল্গুনে; তেমনি নিজেদের স্বাধীনতার জন্য তাঁরা লড়ায় করতে জানে।

আরেক ফাল্গুন-জহির রায়হান বই রিভিউ

মানব চেতনা বেশ আশ্চর্যজনক একটা ধাঁধাঁ। কিন্তু, এই ধাঁধাঁ থেকে যখন কোন আবেগ নিঃসৃত বোধের উদয় হয়; তবে তার জন্য একজন মানুষ জীবন দিতেও দ্বিধা করে না। আর, এইভাবেই হয়তো একটা সময় মানুষরা তাদের বসবাসের ভুমিকে নিজের মনে করতে থাকে এবং তাকে নাম দেয় নিজের দেশ হিসেবে । জেগে ওঠে তাঁদের মনে দেশাত্মবোধ। এরপর যখন অন্য কোন ভূখণ্ডের মানুষ সেই ভূখণ্ডে আগ্রাসন বা শাসন চালানোর চেষ্টা করে; তখন সেই উদিত আবেগ নিঃসৃত দেশাত্নবোধ দিয়ে মানুষ তার জন্মভুমির জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করে না।

আর, এই রকমই আবেগ নিঃসৃত বোধ জেগেছিল ১৯৫২ সালের যুবক আর বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের মনে। বাংলাদেশের যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে জন্মও হয়নি; তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষার জন্য চাপিয়ে দেয়া হয় উর্দু ভাষা, যা কোন বাঙ্গালী কখনও শোনেনি তার মায়ের মুখে। তাই, জেগে উঠে বাংলার সন্তানেরা আর তাঁরা শুরু করে আন্দোলন। কিন্তু, মারমুখো সরকার বাহীনি তা সহ্য করতে না পেড়ে গুলি ছুড়ে হত্যা করে বাংলার কিছু তেজদিপ্ত সন্তানদের। তাঁরা লুটে পড়ে মাটির বুকে!

তাঁরা আমাদের ভাষা শহিদ। আমাদের কারও ভাই, কারও বাবা, কিংবা ছিল কারও জীবনের প্রিয়তম প্রেম! তাই আমরা তাঁদের ভুলব না। ভুলবো না যতদিন আমাদের এই মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে থাকব। আর, আজকের এই সময়ে যখন আমরা আনন্দ ভরে মনে দুঃখ-সম্মান-শ্রদ্ধা নিয়ে যখন ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছি। স্বাধীনতার আগে তেমন ছিল না। এবং, এই স্মরণীয় দিনটিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ ছিল না।

আর, এই দিনটিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমবেত হয়ে জাতীয় শোক পালন করার সুযোগ যারা করে দিয়েছেন তাঁদের গল্পটি বলা হয়েছে “আরেক ফাল্গুন ” উপন্যাসে। “আরেক ফাল্গুন” উপন্যাসটি যদিও জহির রায়হানের একটি কল্প-উপন্যাস তবুও তাতে যেন আবেগ আর বিবেকের পরিস্ফুটনের ফলে হয়ে উঠেছে বাস্তব। আর, জহির রায়হানের চলচ্চিত্রিত উপন্যাস লেখার স্বভাবে তা হয়ে উঠেছে আরও একটু গতিময়। ফলে উপন্যাসের প্রত্যেকটি চরিত্রে যেন চলে আসে চলমান এক তেজদিপ্ত প্রাণোচ্ছলতা।

তো এই ছিল মূলত আরেক ফাল্গুন-জহির রায়হান উপন্যাসের সারমর্ম বরনয়ার পর বইটির পাঠ পরবর্তী পর্যালোচনা। আর আরেক ফাল্গুন-জহির রায়হানের এমন একটি উপন্যাস যা একসাথে অনেক গুলো ঘটনা নিয়ে চলেছে। এমনকি ঘটনার পেছনের একজনের জীবনও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *