March 27, 2024
সাহিত্য পাঠের উপকারিতা

সাহিত্য পাঠের উপকারিতা

সাহিত্য পাঠের উপকারিতা নিয়ে কথা বলেতে গেলে হয়তো একটি নিবন্ধে শেষ করা যাবে না। তবে, এই নিবন্ধটিতে চেষ্টা করব মানব জীবনে সাহিত্য পাঠের উপকারিতা নিয়ে কথা বলার এবং বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার।  মানুষের জৈবিক ক্ষুধা মেটানোর পর-পরই জেগে ওঠে মনের ক্ষুধা। আর, অনেকটা মনের ক্ষুধা মেটানোর জন্যই মানুষ সাহিত্য রচনা করেছে এবং পঠিত ও লালিত হয়ে এসেছে হাজার বছর ধরে।

সাহিত্য কেন চর্চা করব? সাহিত্য কেন পাঠ করব?

সাহিত্য চর্চার শুরু হয়েছে মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য। আর, সাহিত্যের সুচনা হয়েছে মানুষের ঘটনা বর্ণনার অভ্যাস থেকে। মানুষ তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা করতে চেয়েছে ভাষা সৃষ্টির আগে থেকেই। তাই, যখন মানুষ ঘটনা বর্ণনার করার চেষ্টায় ভাষা আবিষ্কার করলো এবং কথা বলতে শিখলো; তারপর থেকে একটা সময় পর মানুষ শুরু করল তাদের ভাবনা এবং তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে ধরে রাখতে।

তাই মানুষ লিপি আবিষ্কার করল এবং তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে লিপিবদ্ধ করতে রাখলো বিভিন্ন পাথর ফলকে খদায় করে। তারপর একটা সময় মানুষ কালি আবিষ্কার করলো এবং বিভিন্ন প্রানির চামড়ায় লেখা শুরু করল। এরপর আসলো কাগজ। কাগজ আবিস্কারের পর থেকে মানুষ আরও বেশি করে শুরু করলো তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা সংরক্ষণ এবং, তা যেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষা হয়ে থাকতে পারে এই উদ্দেশ্যে।

আমারা মুলত আমাদের অগ্রজ মানুষদের থেকেই শিক্ষা পেয়ে থাকি।আর, মূলত ঘটনা চক্রের ধারা অব্যাহত হয়েই আছে এই সব সাহিত্যের কারণে। আমাদের মননশীলতা এবং বোধ তৈরি হয়েছে আমাদের অগ্রজদের বর্ণনা করে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা চক্রের কারণে। তাই, যদি আমারা নিজেকে জানতে চাই, তবে আমাদের উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে হবে, আর অবশ্যই জানতে হবে আমাদের অগ্রজদের।

আদিকাল থেকেই প্রায় প্রত্যেক মানুষের মনে একটি প্রশ্ন থাকেই। আর তা হল, মানুষের উৎপত্তি কোথায়? আমারা যখন আমাদের অগ্রজদের এবং তাদের অগ্রজদের; এইভাবে একদম প্রাথমিক অগ্রজদের যখন জানবো, তবেই আমারা হয়তো আমাদের উৎপত্তি জানতে পারবো। ক্রমাগত স্রোতের মতো বয়ে যাওয়া সময়ে আর আমাদের মৃত্যুর কারণে তা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই সাহিত্য আমাদের জন্য রেখে যায়, নির্দেশনা, পথ অথবা সন্দেহ। রেখে যায় সত্য- মিথ্যা আর তাকে চিহ্নিত করার উপায়।

এইসব বিষয়গুলো একজন মানুষ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত মৌলিক। আর, তাই আমরা সাহিত্য চর্চা করবো অর্থাৎ নতুন সাহিত্য রচনা করবো এবং একই সাথে আমাদের অগ্রজদের সাহিত্য পাঠ করবো।

সাহিত্য পাঠের উপকারিতা কি?

ওপরের অংশ পড়ার পরও যদি আপনার মনে এখনও প্রশ্ন থাকে, সাহিত্য পাঠের উপকারিতা কি? তবে আমি আরও সহজ করে বলার চেষ্টা করবো সাহিত্য পাঠের উপকারিতা সম্পর্কে। উপরের অংশ থেকে আশা করি বুঝতে পেরেছেন; কেন আমাদের সাহিত্য চর্চা আর সাহিত্য পাঠ করা উচিত।

আগেই বলেছি, আর আবর বলছি; সাহিত্য হল মানুষের মনের খাবার। মানুষ তাঁর প্রয়োজনের তাগিদ মিটিয়ে মনের ক্ষুধা মেটানোর জন্য সাহিত্যের চর্চা শুরু করেছে। বর্তমান সময়ে সাহিত্য বলতে মূলত কোন বিষয়বস্তুর লেখনীকে বোঝায়; যাতে একজন মানুষের শিল্পের ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।

যদি সাহিত্য পাঠের উপকারিতা নিয়ে কথা বলতে চাই, তবে বলা যায় সাহিত্য পাঠে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটে, আমাদের অধ্যায়নের অভ্যাস গড়ে ওঠে, সাহিত্য পাঠে অবসর কাটে শিক্ষণীয়। মূলত এই তিনটি দিক নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করলে বাদবাকি সুদুর প্রসারি উপকারিতা সম্পর্কেও জানা যাবে।

সাহিত্য পাঠের উপকারিতা

সাহিত্য পাঠে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটে

এই পৃথিবীতে যতগুলো ভাষা আছে; আর তাঁর যতগুলো সাহিত্য আছে, তার একাংশও যদি আমরা পড়তে পারি তবে আমদের বুদ্ধির বিকাশ হবে বৈশ্বিক জ্ঞান সম্পন্ন। আর, একজন মানুষ তাঁর জীবনে বেশ কয়েকটি ভাষা শিখতে পারে, আর কোন ভাষা শিখে সেই ভাষার সাহিত্য না পাঠ করা বেশ অনর্থক।

সাহিত্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়, আর সেই সব আলচনায় বিভিন্ন বিষয় থাকে যা পাঠ করার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ বোঝা সম্ভব হয় না। তাই, দেখা যায় বিভিন্ন সময় কোন গল্প অথবা উপন্যাস পড়ার পর আমরা তৎক্ষণাৎ সেই উপন্যাস বা গল্পের মূল উপজীব্য বোঝা যায় না। আর, সেই উপজীব্য নিয়ে ভাবতে গেলে আমাদের অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আরও ভাবতে হয়।

যাতে করে আমাদের ভবানার সিমানা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তাছাড়াও সাহিত্য রচনা করা হয় বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ওপর, বলা যায় পৃথিবীতে যতগুলো, আর যত বিষয় এর ওপর সাহিত্য রচনা করা হয়্যেছে তা মানুষের দৃষ্টিগোচর প্রায় সব বস্তু এবং জীব নিয়েই রচনা করা হয়েছে।

সাহিত্য পাঠে অধ্যায়নের অভ্যাস গড়ে ওঠে

সাহিত্যের বিভিন্ন উপজীব্য নিয়ে যখন আমাদের ভাবনার বিকাশ ঘটে, ঠিক একই সাথে আমাদের ভেতর এক নতুন সত্তার উদয় হয় যা আমাদের কৌতূহলের ওপর অধ্যবসায় করতে তাগিদ দেয়। ফলে আমাদের মনে জন্ম নেয়া নতুন কৌতুহল গুলো নিয়ে আমাদের ভেতর একটা অধ্যবসায়ের পিপাশা তৈরি হয়।

ফলে এক বিষয় নিয়ে ভাবতে গিয়ে আরও অনেকগুলো ভাবনার উদয় হয় যাতে নতুন পিপাশা তৈরি হয়, আর দিন দিন আমাদের অধ্যবসায়ের অভ্যাস বাড়তেই থাকে। তাই, বলা যায় সাহিত্য পাঠে অধ্যায়নের অভ্যাস গড়ে ওঠে।

সাহিত্য পাঠে অবসর কাটে শিক্ষণীয়

যদি আমরা আমাদের অবসর সময় সাহিত্য চর্চা বা সাহিত্য পাঠে ব্যয় করি তবে আমাদের সয়ময়টা কাটবে শিক্ষণীয়। কারণ, ওপরের অংশে যে কৌতুহল ও পিপাশার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা আমাদের মনের ভেতর বেশ অনেকগুলো ভাবনার আবিষ্কার করায়। যাতে আমরা নতুন কিছু খুজি আমাদের ভাবনার মাধ্যমে। আর, আমাদের ভাবনার ক্রমাগত বিকাশেই আমরা নতুন নতুন বিষয় শিখতে পারি। আর তাই বলা যায় সাহিত্য পাঠে আমাদের অবসর কাটে শিক্ষণীয়।

তো এই ছিল সাহিত্য পাঠের উপকারিতা। আশা করি যারা পড়েছেন শেষ পর্যন্ত; ভালো লেগেছে। চাইলে আপনি আরও পড়তে পারেন আমাদের ওয়েবসাইটে সাহিত্য সম্বন্ধীয় আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। বাংলা সাহিত্যে কল্প-বিজ্ঞান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *