April 18, 2024
গল্প ও ছোট গল্পের মধ্যে পার্থক্য

গল্প ও ছোট গল্পের মধ্যে পার্থক্য

গল্প ও ছোট গল্পের মধ্যে পার্থক্য বেশ বিস্তৃত। আবার অনেক ক্ষেত্রে খুব সহজেই একটি ছোট গল্প আর একটি গল্পের মধ্যে পার্থক্য করা যায়। এই পার্থক্য বিষয়টি নির্ভর করে, কোন গল্পের বিষয় কতটা ব্যাপক তাঁর ওপর। নির্ভর করে শব্দের প্রয়োগ, ঘটনা ও  ঘটনা বর্ণনার বিস্তৃতির ওপর। এই নিবন্ধটিতে আমি চেষ্টা করবো আপনাদের সামনে ছোট গল্প ও ছোট গল্পের মধ্যে পার্থক্য গুলো সাবলীল ভাবে বর্ণনা করে তুলে ধরার।

মানব সাহিত্যে গল্প বা ছোট গল্পের বিস্তৃতি

সাহিত্যের সূত্রপাত হয়েছে গল্প বলার মাধ্যমে। যদি গল্পের কথা বলি; তবে বলে রাখা উচিত মানুষরা যখন গুহায় বাস করতো তখনও মানুষ গল্প বলতো। এমনকি মানুষ যখন ভাষা আবিষ্কার করেনি; তখনও মানুষ ছবি একে গল্প বলার চেষ্টা করতো। এবং মানব সভ্যতার বিকাশে গল্পের বিস্তৃতি এত সুদুর প্রসারি যে, বলা যায় মানব সভ্যতার সুচনাই হয়েছে গল্প বলার মাধ্যমে।

আর, স্বভাবগত কারণেই মানুষ গল্প করে, আর গল্প করতে ভালোবাসে। মানুষ সুখের গল্প করে, দুঃখের গল্প করে, বানায়ে গল্প বলে, সত্য গল্প বলে, এমনকি আমরা যেসব ইতিহাস পড়ি; সেগুলো আসলে একটা সময়ের প্রামাণিক গল্প ছাড়া আর কিছুই না। তো মানুষ যেখানেই হোক, যেভাবেই হোক; গল্প বলে।

আর, যখন মানুষরা সাহিত্য শব্দ আবিষ্কার করল সেই থেকে গল্প বলার আর, গল্প পড়ার অভ্যেস বেড়েই যেতে লাগলো। তারপর থেকে মানুষ তার মনের ক্ষুধা মেটাতেই অনেক খানি গল্প পড়া শুরু করল। আর, মানব বিকাশের ধারায় মানুষের প্রথম বিনোদন ব্যবস্থা ছিল গল্প। আর, তার ব্যাপকতা এখনও লক্ষ্য করা যায়। সাহিত্যের শুরুর দিকে মানুষ গল্পের সাথে ছন্দ লাগিয়ে তাদের গল্প গুলোকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করতো। আর এই ভাবে তারা সফলও হয়েছেন। জেগুল কে আমার মহাকাব্য বলে জানি।

তারপর, সাহিত্যের ধারায় একে একে যোগ হল নতুন নতুন গল্প বলার ধারা। কবিতা,উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র, আর গল্প তো ছিলই তাতে আরও স্পষ্ট ধারা হল ছোটগল্প, শুধু গল্প; যা ছোট গল্পের চেয়ে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে একটু বেশি, যোগ হল গল্পের ভাগ, কাল্পনিক আর বাস্তব। এই ভাবে একে একে এই গল্প বলার ধারা গুলো হয়ে গেল সতন্ত্র এক-একটি সাহিত্য প্রকাশ।

বর্তমান সময়ে বসে এই গল্প বলার বিস্তৃতি নিয়ে গল্প বলতে গেলে তা হয়তো একজন মানুষের সারাজীবন বলেও শেষ হবেনা।

গল্প কি? আর, ছোটগল্প কি?

গল্প কি বা গল্পের সংজ্ঞা দেয়া বা সঙ্গায়িত করা একি সাথে খুব সহজ আবার খুব কঠিনও। কারণ, গল্প বিষয়টির ভুমিকা মানব জীবনে সংজ্ঞার ওপরে। আর এটি মানব সত্তার সাথে এমন ভাবে জড়িত যে এটি নিয়ে ভাবনার সময় আমরা একটা গল্পই বানাই।

গল্প কি? গল্প কাকে বলে? 

তবে যদি সাহিত্যের ভাষায় গল্পের সংজ্ঞা দেই তবে বলে হয়; গল্প হল কোন কাল্পনিক বা বাস্তব ঘটনার বর্ণনা যা মানুষ ভাষায় প্রকাশ করে, লিপিবদ্ধ কোরে কিংবা মুখে বোলে। আর, এক্ষেত্রে গল্পের বিষয়বস্তুর আভাস দেয়া হয় গল্পের শিরনামের মাধ্যমে। কোন গল্পের বিস্তৃতি নির্ভর করে সেই গল্পের বিষয়বস্তুর ওপর।

ছোটগল্প কি? ছোটগল্প কাকে বলে?

ছোট গল্পের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ভাবে কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয়া যায় না। তবে ছোট গল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মার্কিন লেখক এডগার অ্যালান পো বলেছেন, যে গল্প অর্ধ হতে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোট গল্প বলে।

আবার অপরদিকে আরেকজন ব্রিটিশ লেখক হারবার্ট জর্জ ওয়েলস এর মতে ” ছোটগল্প সাধারণত ১০ হতে ৫০ মিনিটের মধ্যে শেষ হওয়া বাঞ্ছনীয়। ” আর, বাংলা সাহিত্যে ছোট গল্পের বিস্তৃতিও সুদুর প্রসারী।

গল্প ও ছোট গল্পের মধ্যে পার্থক্য

ওপরের বর্ণনায় চেষ্টা করেছি গল্প ও ছোট গল্পের সংজ্ঞা দেয়ার; যাতে করে গল্প ও ছোট গল্পের মধ্যে পার্থক্য করা সহজ হয়ে যায়। আগেই বলেছি গল্প ও ছোট গল্পের মধ্যে সবচেয়ে সহজ পার্থক্য হল গল্পের বিস্তৃতি। কোন গল্পে একটি বিষয় থাকে এবং সেটি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়। যার ফলে সময় পরিসর বেশ বিস্তীর্ণ হয়। আর, ছোট গল্পের এই ক্ষেত্রে সময় পরিসর একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য গল্পের চেয়ে অনেক গুনে কম।

আর, আরেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য গল্পের পরিনতি শেষে গিয়ে স্পষ্ট হয়। তবে এটি ছোটগল্পে তা হয় না। ছোট গল্পের শুরু আর শেষ, কোন পরিণতির কাছে দায়বদ্ধ থাকে না। বেশির ভাগ সময় একটি সার্থক ছোট গল্প পড়তে গেলে দেখা যায়; গল্পের যেই মুহূর্তে পাঠকের মনে গল্পটি সাড়া জাগায়; ঠিক সেই মুহূর্তেই গল্পটির শেষ হতে পারে।

আর, ছোট গিল্পের পরিণতি পূর্ণ দৈর্ঘ্য গল্পের পরিণতির মতো নির্দিষ্ট নয়। এক্ষেত্রে পরিণতিটি পুরপুরি পাঠকের ওপর। এখতি ছোট গল্প পড়ে পাঠক তাঁর চিন্তা ধারায় যত দূর যেতে পারেন ঠিক তত দূরই সেই গল্পের বিস্তৃতি হয়। একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য গল্পের ভাষাগত প্রকাশ, একটি ছোট গল্পের ভাষার চেয়ে আলাদা।

ছোট গল্পে বেশির ভাগ সময় অভিধান নিঃসৃত শব্দ ব্যাবহার করা হয় যাতে করে বড় একটি বাক্যকে ছোট শব্দে প্রকাশ করা হয়। যার কারণে পূর্ণ দৈর্ঘ্য গল্পগুলো পড়ার সময় সেগুলোর শব্দ নিয়ে তেমন বেশি বেগ পেতে হয় না। কিন্তু, যখন একটি ছোট গল্প পড়া হয়; তখন সেখানে শব্দের খেলায় মেতে থাকা গল্পকারের ছোট গল্পের পাঠোদ্ধার করে কিঞ্ছিত বেশি সময় লাগে।

তবে, এক্ষেত্রে আগেই বলে রাখা উচিত; সব ছোট গল্পেই যে শব্দের পরিকল্পিত খেলা থাকে তা না। অনেক গল্পকার রা খুব সাবলীল ভাবে, সাধারণ ভাবে বেশ অসাধারণ কথাও বলতে পারেন; আর তা নিতান্তই সেই লেখকের বাগ্মিতা।

আমি আমার এই নিবন্ধে কোন উদাহরণ টানার চেষ্টা করিনি, কারণ আমার এই নিবন্ধটি যারা পড়তে এসেছেন তাদেরকে আমি শুধু তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ারই চেষ্টা করেছি। আশা করি যারা এই নিবন্ধটি শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদের ভালো লেগেছে। শুধু মূল বিষয়টা জেনে।

আর, গল্প ও ছোট গল্পের মধ্যে পার্থক্য এর চেয়ে সুনির্দিষ্ট করে বোঝানো সম্ভব নয় আমার বিশ্বাস। যদি সম্ভব হয় তবে আপনিও লেখেতে পারেন; যারা প্রশ্নটি করেছেন তাদের সুবিধার্থে। ধন্যবাদ!

One Comment

  1. Avatarঅভিজিৎ কুমার রয় Reply

    খুব ভালো আলোচনা! অনেক উপকৃত হলাম স্যার।

    ‘প্রভাত কুমার রবীন্দ্র সমসাময়িক যোগ্য উত্তরসূরি’- মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
    স্যার এই প্রশ্নটার উত্তরটা করে দিলে অনেক উপকৃত হতাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *