April 20, 2024
একটি নিছক ভালোবাসার গল্প

একটি নিছক ভালোবাসার গল্প

একটি নিছক ভালোবাসার গল্প। অর্থাৎ, যে ভালোবাসার ছিলনা কোন পূর্ব পরিকল্পনা। ছিলনা এক জন আরেকজনকে প্রেমের প্রস্তাবের কোন পরিকল্পনা বা ভাবনা। শুধু একটি নিছক ভালোবাসার গল্প। প্রেমভালোবাসা একটি আপেক্ষিক বিষয়। প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, আচার-আচরণ ভিন্ন ভিন্ন তাই প্রতিটি মানুষের কাছে ভালোবাসা সংজ্ঞাও ভিন্ন ভিন্ন। প্রকৃত ভালোবাসা এমন এক জিনিস, যা ছুঁয়ে দেখা যায় না; শুধু অনুভব করা যায়। আজকে এমনই দুজন তরুণ-তরুণীর গল্প পড়বো আমরা।

একটি নিছক ভালোবাসার গল্প- পরিচয়পর্ব

হাসান মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ৩য় বর্ষের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তিনি কষ্ট করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন, তার পারিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। হাসান নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ১ টা টিউশনি আর অনলাইনে কিছু কাজকর্ম করে। একদিন সে অনলাইনে একটি প্রোজেক্ট এর কাজ করছে সেখানে তার সাথে এক সুন্দরী তরুণীর পরিচয় হয়।

মেয়েটির নাম ফারহানা জামান। সে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর এর পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করছে। হাসান যে এলাকায় প্রাইভেট পড়ায় সেখানেই ফারহানার বাসা। একদিন প্রাইভেট পরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফিরে যাওয়ার পথে ফারহানার সাথে দেখা হয়ে যায়। হাসান লক্ষ করলো সে ইন্টারনেটে ফারহানাকে যতটা সুন্দর দেখেছিলো বাস্তবে সে এর চেয়েও বেশি সুন্দরী।

মেয়েটির কণ্ঠস্বর, মায়াবী চাহনি হাসানের মনকে পাগল করে দেয়! হাসান জীবনে এর আগে কখনই প্রেমে পরেনি, তাই হাসান বার বার এই অনুভুতি ফিরে পেতে চাইছে।

একটি নিছক ভালোবাসার গল্প

যেভাবে ভালোবাসা থেকে প্রেম হল

হাসান ২-বছর ধরে অনলাইনে কাজ করছে আর ফারহানা মাত্র ৬ মাস যাবত কাজ করছে তাই সে অনেক কিছুই এখনও জানে না। তাই কাজের জন্য সে হাসানের সহায়তা চাইলো। এভাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের কথা হতে হতে তারা একজন অন্য জনের প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পরে। প্রতিদিন ঘণ্টার পর পর তাদের কথা হলেও কিভাবে যে সময় গুলো পার হয়ে যাচ্ছে তারা কেউই তা আঁচ করতে পারতো না।

একদিন ফারহানা অনেক অসুস্থ হয়ে গেলে তার জমে থাকা কাজগুলো হাসান করে দেয়। ফারহানাদের বাসার কাছে একটি পার্কে তারা প্রতিদিন বিকেলে দেখা করতো, সেখানে দুজন অনেক ভালো সময় কাটাতো। হাসান যখন ফারহানার চোখের দিকে তাকাতো তখন তার কাছে মনে হতো সে এক মায়ার জগতে চলে যাচ্ছে। ফারহানার মুখের হাসি দেখলে হাসানের মনে হতো তার নিজের জীবনের সব দুঃখ-কষ্টগুলো ফারহানার হাসির মাধ্যমেই ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাচ্ছে।

হাসান যখন ফারহানার পাশে বসতো তখন তার শরীরের মধ্যে অন্যরকম এক শিহরণ হতো। হাসান বুঝতে পারছে না এটা কি ভালোবাসা নাকি শুধুই ভালোলাগা। এভাবেই কেটে গেলো অনেক দিন, কত অজস্র রজনী যে তারা কথা বলে কাটিয়ে দিয়েছে তারা নিজেও তা জানে না। এভাবেই তাদের মধ্যে গভীর প্রেম হয়ে যায়।

একটি নিছক ভালোবাসার গল্প

একটি নিছক ভালোবাসার গল্পে তৃতীয় সত্তা

স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতা ফারহানাকে দেখে ফারহানার প্রেমে পরে যায়। হাসানের সাথে ফারহানার এই সক্ষতা মেনে পারেনি ওই নেতা। ফারহানার সকল কার্যক্রম সে পর্যবেক্ষণ করে। একদিন পার্কে হাসান-ফারহানাকে হাত ধরে ঘুরতে দেখায় তার সন্দেহ আরও জোরালো হয়। এর কয়েকদিন পরে ওই নেতা হাসানকে সাবধান করে দেয় যেন ফারহানার আশে পাশে তাকে না দেখে।

হাসান রাজশাহীর একটি প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে, সে আর চায়নি কোন সমস্যায় জড়াতে। ফারহানা ১৯ বছর বয়সী একজন তরুণী, ওই প্রভাবশালী নেতা ফারহানাকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে যায় তার বাড়িতে। মেয়েটির পরিবার ভাবে ছেলেটি অনেক প্রভাবশালী এবং সম্পদশালী তাই ফারহানার পরিবার ওই নেতার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। অন্যদিকে ফারহানা মানসিকভাবে অনেক ভেঙ্গে পরে, কারণ ওই নেতাকে সে মোটেই পছন্দ করে না।

ফারহানার মন প্রাণ জুড়ে শুধুই হাসান। সে হাসানকে ফোন দিয়ে বলে যে ওই নেতা তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে এবং সবাই এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। হাসান তার সাথে ঘটে যাওয়ার ঘটনাটি ফারহানাকে বলে। ফারহানা ওর বাবা-মাকে বলে কোনভাবেই তার পক্ষে হাসান ব্যতীত অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। হাসান বলে ” তোমার পরিবার কি আমাকে তোমার স্বামী হিসেবে মেনে নেবে? ” তখন ফারহানা বলে ” আমাদের ভালোবাসা দিয়েই সবার মন জয় করে নিতে হবে। ”

একটি নিছক ভালোবাসার গল্প যেভাবে শেষ হল

ফারহানা তার আর হাসানের সম্পর্কের ব্যপারে তার পরিবারের সবাইকে জানায়। ফারহানা এটাও সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে হাসানকে ছাড়া তার জীবন অসম্পূর্ণ এবং হাসানকে ছাড়া সে সুখী হতে পারবে না। হাসান একজন অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। সে ফারহানার অনুপ্রেরণায় ফ্রীল্যাসিং করে বর্তমানে অনেক ভালো পর্যায়ে রয়েছে। ফারহানা তার পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায় ফারহানার পিতা-মাতা তার মতামতকেই গুরুত্ব দিয়েছে।

ফারহানার পরিবার ও হাসানের পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেওয়ায় ওই নেতা তাদের পথে আর বাধা হতে পারেনি। ফারহানা হাসানকে বলে যতই দুঃখ-কষ্ট আসুক না কেন আমরা দুজন যদি একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রাখতে পারি এবং একজনের বিপদে অন্যজনকে মানসিকভাবে সমর্থন করতে পারি তাহলে তারা জীবনে অনেক সুখি হবে। দুই পরিবারের সম্মতিতে হাসান- ফারহানার বিয়ে হয়।

বিয়ের অনেক বছর পরেও ফারহানার প্রতি হাসানের আবেগ পূর্বের মতই রয়েছে। সে এখনও সময় পেলে ফারহানাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে বের হয়, ফারহানার চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে যায়, আর হাসান অপলক দৃষ্টিতে ফারহানার দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবেই সারাটি জীবন তারা একে অপরের পাশে থেকে কাটিয়ে দেয়।

তো এইভাবে একটি নিছক ভালোবাসার গল্প শেষ হল। আশা করি যারা পড়েছেন, তাদের ভালো লেগেছে এই ভয়ানক বাস্তবে একটি সরল সুন্দর নিছক ভালোবাসার গল্প পরে। আমাদের এই  ওয়েবসাইট আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ভাষায় নিবন্ধ লিখে থাকি। এটি যদিও কোন নিবন্ধ নয়; তবুও একজন নিবন্ধক যখন একটি গল্প লিখতে চেয়েছেন, এমন শিরনাম বেশ স্বাভাবিক তাঁর কাছে।

আপনি চাইলে আরও পড়তে পারেন, বাংলা সাহিত্য সম্পর্কিত আরও বিভিন্ন নিবন্ধ। পড়তে পারেন; সাহিত্য পাঠের উপকারিতা নিয়ে একটি নিবন্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *